তালেব মুন্সি ইন্নালিল্লা পড়তে পড়তে আবার ওটাকে ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুচারজন শিশু কিশোরও ওঠে উৎসাহ নিয়ে সহযোগিতায় নেমেছে।
যাচ্ছেনা কেবল অন্তরা। ওর প্রিয় হাঁসটা। সেই ডিম ফুটে বের হবার পর থেকেই অন্তরার কোলে পিঠে এখন হাঁস- টিটিমনি। ছেলে হাঁস- গলার স্বর তাই ফ্যাসফ্যাসে। নীলাৎ সবুজ,বাদামী,ছাইরং এর সমন্বয়ে টিটিমনি বিলের মধ্যে হয়ত খাচ্ছে- অন্তরা স্কুলের বইগুলো টেবিলে রেখেই ছুট্। বিলের পাড়ে গিয়ে ডাকে-টিটিমনি .....।
বিলের কোন কচুরীপানা নয়তো কোন ঘাসের ঝোঁপ থেকে সাড়া দেয়- স্যাঁক্ স্যাঁক্ স্যাঁক্। অর্থাৎ- এই যে এখানে-।
অন্তরা এবার আধো আধো গলায় বলে- খাবেনা? টিটিমনি জবাব দেয়- স্যাঁক্-স্যাঁক-স্যাঁক্ অর্থাৎ দাঁড়াও আসছি।
অন্তরার হাতে খাবারের বাটি। টিটিমনি খেয়ে নেয় তৃপ্তি ভরে। তারপর চলে যায় বিলের মধ্যখানে।
আজ তালেব মুন্সি আর তপু, সানু, শম্পারা অনেক কসরৎ করে টিটিমনিকে দ্বিতীয়বারের মত ধরে এনেছে।
অন্তরা পড়ার টেবিলে উপুর হয়ে কাঁদছে। আরিফা বেগম ধমকে বলছেন- সামান্য একটা হাঁস। এটার জন্য আর ন্যকামো করার দরকারটা কী।
কান্নায় ভারী এবং ভেজা গলায় অন্তরা প্রশ্ন করে- এটাকেই জবাই করতে হবে ? অন্যটাকে করতে তো পারতে ? মা উত্তর দেন - অন্যগুলোতো ডিম দেয়। এটা ছেলে হাঁস। দুদিন আগে পড়ে খেয়ে ফেলতে হবে নয় বিক্রি করতেই হবে।
অন্তরা যুক্তি এবার দেখায় - হাঁস না হয় মোরগটা করে দাও।
কিন্তু উনারা আবার হাঁসের মাংস পছন্দ করেন।
উনারা কারা মা ? - অন্তরার প্রশ্ন।
মার উত্তর-
উনারা আজ তোর আপুকে দেখতে আসবে।
কারা দেখতে আসবে এবার একটু আঁচ করে। গত তিন চারদিন যাবৎ জাবেদ চাচা এবাড়ীর আশেপাশে বেশ ঘুর ঘুর করছেন। বড়রা কথাবার্তা বলছেন বড় আপুকে নিয়ে।
অন্তরার সহপাঠি দীনার বড় বোনকেও কয়েকজন দেখতে এসেছিলো। এরপরই বড়বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। এবার
বোধ হয় অন্তরার নিজেরই বড়বোনের পালা। তবুও প্রশ্ন করে মাকে-
বোধ হয় অন্তরার নিজেরই বড়বোনের পালা। তবুও প্রশ্ন করে মাকে-
আচ্ছা মা দেখতে এলেই কী আপুর বিয়ে হয়ে যাবে ?
জানিনা মা- অন্যমনষ্ক উদাসীন উত্তর মায়ের। এরপর বললেন - ওনারা পছন্দ করলে হবে।
না হলে কী হবে ?
মা চোখে আচল দিলেন।
অন্তরা ভাবে। সারাদিন ভাবলো। সারারাত ভাবছে। সকাল পর্যন্ত। সমাধান পাচ্ছে না।
সকালে ব্রাশ করতে করতে মাকে আবারো প্রশ্ন করে-আচ্ছা মা আমরা যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতাম তাহলে কেউ বিয়ে করে নিয়ে যেত ?
তা কেন। মেয়েদেরকেই বিয়ে হলে বরের সাথে শ্বশুরবাড়ী চলে যেতে হয়।
হাউমাউ করে কাঁদছেন আরিফা বেগম। অন্তরার ভিজে চোখ দুটোতে অনেকবার চুমু খেলেন।
অন্তরার মনে পড়ছে- গতকাল আপুকে সুন্দর করে সাজিয়ে হাজির করা হয়েছিলো । বেশ কজন বড় মানুষ এসে দেখলেন। খেলেন। তারপর চলে গেলেন। প্রশ্নটা খটকাই থেকে গেল অন্তরার। তবুও বলল সে- মা- ওনারা কি আপুকে পছন্দ করেছে ?
মার উত্তর- হ্যাঁ।
এবার সত্য সত্য কেঁদে ফেলছে অন্তরা। মাকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলছে - কেন পছন্দ করেছে। পছন্দ না হলেই তো ভাল হতো।
মা নিজেকে লুকাবার জন্য কাজের ব্যস্ততা দেখালেন।
(২) সহপাঠি দীনার জন্মদিনে অনেক মানুষ। ছোট বড় নানান বয়েসী। শিশু আর মহিলাদের সংখ্যাই বেশি। অন্তরা ওর মার সাথে।
কেক কাটার পরপরই অন্তরা প্রশ্ন শুরু করে-আচ্ছা মা, দীনাকে আজ সবাই দেখতে এসেছে, ওরও কী বিয়ে হযে যাবে ?
চারদিকে একসংগে হো হো, হা:হা:ও ফোরাস শুনে অন্তরা একটু ভয় পেয়ে গেল। ভবছে- প্রশ্ন করাটাতে কোন ভুল আছে কিনা।
এ ওকে সহজ করলেন - আজ দীনার জন্মদিন। আজকের দেখতে আসাটা অন্যরকম।
(৩) দীনার নানু মারা গেলেন। ওইদিনও সবাই দেখতে এসেছে। অনেক দূরের মানুষগুলোও এলেন। সবাই কান্নাকাটি করলেন। তারপর নানুকে বিদায় জানিয়ে সবাই মাটির নীচে রেখে এলেন।
আর একবার অন্তরার বড় খালার একটা বাচ্চা হয়েছিলো ওটাকে দেখতে গিয়েছিলো অন্তরা ওর মার সঙ্গেঁ। সেদিন সবার হাতে মিষ্টি। সবগুলো দেখার মধ্যে কোথায় যেন একটা জট পাকানো লক্ষ করে অন্তরা।
লিখেছেন - মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
মোবাইল : ০১৭১১৪৬৪৩৪৬
No comments:
Post a Comment