Monday, May 7, 2012

অন্যরকম দেখা

(১) অন্তরার মা আরিফা বেগম- খোঁয়াড় খুলে মোটা সোটা একটা হাঁস বের করে জবাই করলেনপাশের বাড়ীর মসজিদের তালেব মুন্সি প্রায়ই এ আজটা করে দেয়বিনিময়ে নয় সৌজন্য থেকে মুন্সিকে এক বাটি তরকারী দিতে হয়
জবাই করার পর হাঁসটা ছেড়ে দেযা হলওটা দিব্যি কাটা গলা নিয়েই
উঠে যথারীতি দাঁড়িয়ে রইল
তালেব মুন্সি ইন্নালিল্লা পড়তে পড়তে আবার ওটাকে ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেদুচারজন শিশু কিশোরও ওঠে উসাহ নিয়ে সহযোগিতায় নেমেছে
যাচ্ছেনা কেবল অন্তরাওর প্রিয় হাঁসটাসেই ডিম ফুটে বের হবার পর থেকেই অন্তরার কোলে পিঠে এখন হাঁস- টিটিমনিছেলে হাঁস- গলার স্বর তাই ফ্যাসফ্যাসেনীলা সবুজ,বাদামী,ছাইরং এর সমন্বয়ে টিটিমনি বিলের মধ্যে হয়ত খাচ্ছে- অন্তরা স্কুলের বইগুলো টেবিলে রেখেই ছুট্‌বিলের পাড়ে গিয়ে ডাকে-টিটিমনি .....
বিলের কোন কচুরীপানা নয়তো কোন ঘাসের ঝোঁপ থেকে সাড়া দেয়- স্যাঁক্‌ স্যাঁক্‌ স্যাঁক্‌অর্থা- এই যে এখানে-
অন্তরা এবার আধো আধো গলায় বলে- খাবেনা? টিটিমনি জবাব দেয়- স্যাঁক্‌-স্যাঁক-স্যাঁক্‌ অর্থা দাঁড়াও আসছি
অন্তরার হাতে খাবারের বাটিটিটিমনি খেয়ে নেয় তৃপ্তি ভরেতারপর চলে যায় বিলের মধ্যখানে
আজ তালেব মুন্সি আর তপু, সানু, শম্পারা অনেক কসর করে টিটিমনিকে দ্বিতীয়বারের মত ধরে এনেছে
অন্তরা পড়ার টেবিলে উপুর হয়ে কাঁদছেআরিফা বেগম ধমকে বলছেন- সামান্য একটা হাঁসএটার জন্য আর ন্যকামো করার দরকারটা কী
কান্নায় ভারী এবং ভেজা গলায় অন্তরা প্রশ্ন করে- এটাকেই জবাই করতে হবে ? অন্যটাকে করতে তো পারতে ? মা উত্তর দেন - অন্যগুলোতো ডিম দেয়এটা ছেলে হাঁসদুদিন আগে পড়ে খেয়ে ফেলতে হবে নয় বিক্রি করতেই হবে
অন্তরা যুক্তি এবার দেখায় - হাঁস না হয় মোরগটা করে দাও
কিন্তু উনারা আবার হাঁসের মাংস পছন্দ করেন
উনারা কারা মা ? - অন্তরার প্রশ্ন
মার উত্তর-
উনারা আজ তোর আপুকে দেখতে আসবে
কারা দেখতে আসবে এবার একটু আঁচ করেগত তিন চারদিন যাব জাবেদ চাচা এবাড়ীর আশেপাশে বেশ ঘুর ঘুর করছেনবড়রা কথাবার্তা বলছেন বড় আপুকে নিয়ে
অন্তরার সহপাঠি দীনার বড় বোনকেও কয়েকজন দেখতে এসেছিলোএরপরই বড়বোনের বিয়ে হয়ে গেছেএবার
বোধ হয় অন্তরার নিজেরই বড়বোনের পালাতবুও প্রশ্ন করে মাকে-
আচ্ছা মা দেখতে এলেই কী আপুর বিয়ে হয়ে যাবে ?
জানিনা মা- অন্যমনষ্ক উদাসীন উত্তর মায়েরএরপর বললেন - ওনারা পছন্দ করলে হবে
না হলে কী হবে ?
মা চোখে আচল দিলেন
অন্তরা ভাবেসারাদিন ভাবলোসারারাত ভাবছেসকাল পর্যন্তসমাধান পাচ্ছে না
সকালে ব্রাশ করতে করতে মাকে আবারো প্রশ্ন করে-আচ্ছা মা আমরা যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতাম তাহলে কেউ বিয়ে করে নিয়ে যেত ?
তা কেনমেয়েদেরকেই বিয়ে হলে বরের সাথে শ্বশুরবাড়ী চলে যেতে হয়
হাউমাউ করে কাঁদছেন আরিফা বেগমঅন্তরার ভিজে চোখ দুটোতে অনেকবার চুমু খেলেন
অন্তরার মনে পড়ছে- গতকাল আপুকে সুন্দর করে সাজিয়ে হাজির করা হয়েছিলো বেশ কজন বড় মানুষ এসে দেখলেনখেলেনতারপর চলে গেলেনপ্রশ্নটা খটকাই থেকে গেল অন্তরারতবুও বলল সে- মা- ওনারা কি আপুকে পছন্দ করেছে ?
মার উত্তর- হ্যাঁ
এবার সত্য সত্য কেঁদে ফেলছে অন্তরামাকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলছে - কেন পছন্দ করেছেপছন্দ না হলেই তো ভাল হতো
মা নিজেকে লুকাবার জন্য কাজের ব্যস্ততা দেখালেন

(২) সহপাঠি দীনার জন্মদিনে অনেক মানুষছোট বড় নানান বয়েসীশিশু আর মহিলাদের সংখ্যাই বেশিঅন্তরা ওর মার সাথে
কেক কাটার পরপরই অন্তরা প্রশ্ন শুরু করে-আচ্ছা মা, দীনাকে আজ সবাই দেখতে এসেছে, ওরও কী বিয়ে হযে যাবে ?
চারদিকে একসংগে হো হো, হা:হা:ও ফোরাস শুনে অন্তরা একটু ভয় পেয়ে গেলভবছে- প্রশ্ন করাটাতে কোন ভুল আছে কিনা
এ ওকে সহজ করলেন - আজ দীনার জন্মদিনআজকের দেখতে আসাটা অন্যরকম

(৩) দীনার নানু মারা গেলেনওইদিনও সবাই দেখতে এসেছেঅনেক দূরের মানুষগুলোও এলেনসবাই কান্নাকাটি করলেনতারপর নানুকে বিদায় জানিয়ে সবাই মাটির নীচে রেখে এলেন
আর একবার অন্তরার বড় খালার একটা বাচ্চা হয়েছিলো ওটাকে দেখতে গিয়েছিলো অন্তরা ওর মার সঙ্গেঁসেদিন সবার হাতে মিষ্টিসবগুলো দেখার মধ্যে কোথায় যেন একটা জট পাকানো লক্ষ করে অন্তরা

লিখেছেন - মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
মোবাইল  :  ০১৭১১৪৬৪৩৪৬

No comments: